একসময় মধ্যযুগের প্রাণী রাখার খোঁয়াড় বলে বিবেচিত ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের বডমিন মুরে অবস্থিত কিং আর্থারের হল আসলে ৪,০০০ বছর পুরনো এবং এটি ইউরোপে অনন্য একটি স্থাপনা বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

নতুন গবেষণায় জানা গেছে, আয়তাকার এই পাথর ও মাটির স্থাপনাটি মধ্যযুগে নয়, বরং মধ্য নিওলিথিক যুগে, অর্থাৎ প্রায় ৫,০০০ থেকে ৫,৫০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। আগে ধারণা করা হতো, এটি গবাদি পশুর খোঁয়াড় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু নতুন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর নির্মাণকাল অনেক প্রাচীন এবং এটি পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি।

প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ জেমস গসিপ বলেন, “এমন ধরনের আরেকটি স্থাপনা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি। এটি সেই সময় কিংবা তার পরবর্তী সময়ের কোনো পরিচিত কাঠামোর সঙ্গে মেলে না।”

গবেষকদের মতে, মধ্য নিওলিথিক যুগ ছিল এমন একটি সময়, যখন মানুষ প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট স্থানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে এবং নানা ধরনের ঘের বা ঘেরাটোপ নির্মাণ করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থাপনাটি কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান বা সম্প্রদায়ের সভার জন্য ব্যবহৃত হতো।

স্থাপনার গঠন ও বয়স: এই আয়তাকার স্থাপনাটি ৪৯ মিটার দীর্ঘ ও ২১ মিটার প্রশস্ত। এর অভ্যন্তরে ৫৬টি খাড়া পাথর রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা ১.৮ মিটার পর্যন্ত। কর্নওয়াল আর্কিওলজিক্যাল ইউনিট এবং রিডিং, সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ও নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে এর অভ্যন্তরীণ অংশ খনন করা হয়েছিল।

তুলনামূলকভাবে বলা যায়, স্টোনহেঞ্জ নির্মাণ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সালে, যেখানে এর বিখ্যাত সার্সেন পাথরের বৃত্ত স্থাপিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ২৪০০ সালের মধ্যে।

নামের রহস্য: এই স্থাপনাটির নাম “কিং আর্থারের হল” হলেও এটি কিং আর্থারের দ্বারা নির্মিত বা তাঁর জন্য তৈরি হয়নি। কিং আর্থার যদি সত্যি থেকেও থাকেন, তবে তিনি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকের অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের ব্যক্তি। অথচ এই স্থাপনাটি তার জন্মের প্রায় ৪,৫০০ বছর আগেই নির্মিত হয়েছে! তবে “কিং আর্থারের হল” নামটি অন্তত ১৫৮৩ সাল থেকে প্রচলিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই প্রাচীন নিদর্শনটি নিওলিথিক যুগের মানুষের জীবনধারা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।