চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত নিষিদ্ধ নগরী (The Forbidden City) বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। এটি চীনের মিং ও কিং রাজবংশের সম্রাটদের বাসস্থান ছিল এবং বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এই স্থাপনাটি চীনের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য শৈলীর অনন্য উদাহরণ।

ইতিহাসের পাতায় নিষিদ্ধ নগরী
নিষিদ্ধ নগরীর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৪০৬ সালে এবং এটি সম্পন্ন হয় ১৪২০ সালে। মিং রাজবংশের তৃতীয় সম্রাট ইয়ংলো এই প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক ও কারিগর এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন। প্রাসাদটি ৭২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং এতে রয়েছে ৯৮০টি ভবন।

ছবি সংগৃহীত

নামের পেছনের রহস্য
নিষিদ্ধ নগরী নামটি এসেছে এর বিশেষ মর্যাদা থেকে। সাধারণ মানুষের জন্য এই প্রাসাদে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, শুধুমাত্র সম্রাট, তার পরিবার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরই এখানে প্রবেশের অনুমতি ছিল। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানটি রহস্যময় ও গুপ্ত ইতিহাসের আধার হয়ে উঠেছে।

স্থাপত্যের নিদর্শন
নিষিদ্ধ নগরীর স্থাপত্য শৈলী চীনের প্রাচীন সভ্যতার প্রতীক। এর ভবনগুলো লাল রঙের দেয়াল ও হলুদ রঙের টাইলস দ্বারা আবৃত, যা চীনা সংস্কৃতিতে সম্রাটের ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের প্রতীক। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য প্রাসাদ, উদ্যান, মন্দির ও শিল্পকর্ম, যা চীনের শিল্প ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতা তুলে ধরে।

ছবি সংগৃহীত

বর্তমান অবস্থা ও পর্যটন
১৯২৫ সালে নিষিদ্ধ নগরীকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয় এবং এটি এখন প্যালেস মিউজিয়াম নামে পরিচিত। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক এই ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে আসেন। পর্যটকরা এখানে প্রবেশের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন এবং গাইডেড ট্যুরের মাধ্যমে এর ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।

ছবি সংগৃহীত

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো নিষিদ্ধ নগরীকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। এটি শুধু চীনের নয়, বিশ্বের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।

নিষিদ্ধ নগরী শুধু একটি প্রাসাদ নয়, এটি চীনের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। এটি বিশ্ববাসীকে চীনের প্রাচীন সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।