আমেরিকার ইতিহাসে দ্রুততম পরিবেশগত সুফল: নিউইয়র্কে কনজেশন চার্জের ছয় মাসেই দৃশ্যমান সাফল্য
নিউইয়র্ক শহরের কনজেশন চার্জ কার্যক্রমের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে চলতি বছরের ৫ জুলাই। মাত্র অর্ধবছরের ব্যবধানে পরিবেশগত দিক থেকে এ উদ্যোগটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম দ্রুত সুফলদায়ক নীতিতে পরিণত হয়েছে।
এ বছরের শুরুতে লন্ডনসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি শহরের পথ অনুসরণ করে নিউইয়র্ক মহানগরীর ব্যস্ত কেন্দ্রে গাড়ি প্রবেশে $৯ ডলার হারে ফি চালু করে কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্ত শুরুতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এবং অনেক যাত্রী ও চালক এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই এই নীতির কার্যকারিতা বিস্ময়করভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
যাতায়াত দ্রুত, দূষণ কম:
নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা ম্যানহাটনের যানজট উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে—প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ কম গাড়ি প্রবেশ করছে। ফলে গাড়ি ও বাসের গতি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বাতাসের মান উন্নত হয়েছে এবং কার্বন নির্গমন কমেছে ২.৫ শতাংশ।
চমকপ্রদভাবে, সড়ক দুর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী যানজটের চাপ হ্রাস পাওয়ায় চালকেরা আগের চেয়ে বেশি ধৈর্যশীল এবং নিরাপদভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন।
জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন:
পরিবহন অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ট্রান্সপোর্টেশন অলটারনেটিভস-এর নির্বাহী পরিচালক বেন ফারনাস জানান, “আমরা যা আশা করেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়েও ভালো ফলাফল এসেছে। পরিবেশ ও জনজীবনে এই পরিবর্তন অত্যন্ত ইতিবাচক।”
তিনি বলেন, ম্যানহাটনের নিচু এলাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক ‘ক্যানাল স্ট্রিট’-এ শুধু শব্দদূষণ-সংক্রান্ত অভিযোগই কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
“দূষণ কমাতে মানুষকে সচরাচর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়—এটাই ধারণা। কিন্তু এখানে মানুষ সরাসরি উপকার ভোগ করছে। আগের সেই সংশয় ও হতাশা অনেকটাই কেটে গেছে,” বলেন ফারনাস।
মেট্রো রেলওয়ে পায় নতুন প্রাণ:
এই উদ্যোগের আরেকটি লক্ষ্য ছিল বিপর্যস্ত ‘মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি’ বা এমটিএ-র জন্য তহবিল সংগ্রহ। এর মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ কোটি ডলার রাজস্ব অর্জনের পথে রয়েছে নিউইয়র্ক, যা দিয়ে সাবওয়ে আধুনিকায়ন, শত শত নতুন ইলেকট্রিক বাস কেনা এবং আঞ্চলিক রেলসেবা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।
বাকি শহরগুলোর জন্য পথনির্দেশক হতে পারে:
যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই নীতির বিরুদ্ধে একাধিকবার আইনি চ্যালেঞ্জ এনেছে, নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আদালতে সব বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে, এই মডেল অন্যান্য মার্কিন শহরেও ছড়িয়ে পড়বে।
যেমনটা ইউরোপে হয়েছে—লন্ডনের মতো শহরে এখন অধিকাংশ মানুষই কনজেশন চার্জকে সমর্থন করে, যেখানে শুরুতে ছিল ব্যাপক বিরোধিতা।