আল-কোরআনের বহু সূরার মতো, একটি সূরার শুরুতেই এসেছে তিনটি রহস্যময় বর্ণ— আলিফ, লাম, মীম। এগুলোকে বলা হয় হরূফে মুক্বাত্ত্বাআত বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর, যেগুলোর প্রকৃত অর্থ কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। কোরআনের বর্ণনার ভঙ্গিমায় এসব অক্ষর যেন পাঠককে উৎসুক করে তোলে, যার মাধ্যমে একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়।

এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে— “এগুলো জ্ঞানপূর্ণ কিতাবের আয়াত,” আর তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন— “এটি হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ তাদের জন্য, যারা সৎকর্মশীল।”

কারা সৎকর্মশীল?

‘সৎকর্মশীল’ শব্দটি শুধুই বাহ্যিক আচরণকে বোঝায় না, বরং এটি অন্তরের বিশ্বাস, নীতিগত আচরণ ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবকে নির্দেশ করে। ব্যাখ্যামূলকভাবে, কোরআনের আলোকে সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—

  • আত্মীয়স্বজন দুঃস্থদের হক আদায়কারী: তারা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন এবং গরিব-দুঃখীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অধিকার প্রদান করেন এবং সহানুভূতি দেখান।
  • সৎকর্মে দৃঢ়, অসৎকর্মে বিরত: তারা অন্যায় ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখেন এবং সমাজে ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকেন।
  • আল্লাহভীতি ও আন্তরিক ইবাদতকারী: সৎকর্মশীল ব্যক্তি ইখলাস ও একাগ্রতার সাথে ইবাদত করে থাকেন। হাদীসের ভাষায়, ‘ইহসান’ হলো এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, যেন তিনি নিজে তাঁকে দেখছেন কিংবা তিনি জানেন, আল্লাহ তাঁকে দেখছেন।

হিদায়াত সবার জন্য, উপকৃত হয় শুধু পরহেযগাররা:

কোরআনকে আল্লাহ তাআলা সারা বিশ্বের জন্য হিদায়াত ও করুণা হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন। তবে বাস্তবতা হলো, এর প্রকৃত উপকার লাভ করে কেবল সেইসব মানুষ, যাঁরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহভীরু, সৎকর্মপরায়ণ এবং আত্মশুদ্ধিতে নিয়োজিত। এ কারণে সূরার সূচনাতেই সৎকর্মশীলদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে— কারণ তারাই প্রকৃত হিদায়াত গ্রহণে প্রস্তুত ও উপযুক্ত।

📚 কোরআনের আলোকে জীবন গড়ার শিক্ষা প্রতিটি মানুষের জন্যই উন্মুক্ত। তবে হৃদয়ে পরিশুদ্ধতা ও কর্মে সততা না থাকলে আলোর দিশা অনেক সময় অন্ধকারেই থেকে যায়।