ইসলামী বিশ্বাসে কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে এক ন্যায়পরায়ণ নেতার আবির্ভাব ঘটবে—যাঁর নাম ইমাম মাহদি। অসংখ্য হাদিসে তাঁর আগমনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর এক ন্যায়নিষ্ঠ পথপ্রদর্শক।

🔹 কে এই ইমাম মাহদি?

ইমাম মাহদির প্রকৃত নাম হবে মুহাম্মাদ। পিতার নাম আবদুল্লাহ। তাঁর বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন সহিহ হাদিসে। মাহদি অর্থ ‘সঠিক পথে পরিচালিত’ বা ‘ন্যায়নিষ্ঠ নেতা’। নবী (সা.)-এর পরিবার থেকেই তাঁর আবির্ভাব হবে। হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, “মাহদি আমার পরিবারের একজন হবেন, যিনি ফাতিমার (রা.) বংশধর।”
📖 (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৮৪)

🔹 তিনি নবী নন, তবে নেতৃত্বে অতুলনীয়

ইমাম মাহদি হবেন না কোনো নবী। বরং তিনি হবেন মুসলমানদের সর্বজনস্বীকৃত নেতা। এমনকি ঈসা (আ.)-ও তাঁর পেছনে নামাজ আদায় করবেন।
📖 (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪০৯)

🔹 কখন কোথায় আগমন করবেন?

ইমাম মাহদির আগমন সময় সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো সাল বা তারিখ নেই। তবে জানা যায়, কিয়ামতের ঠিক আগে পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

কানজুল উম্মাল গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, তাঁর জন্ম হবে মদিনায়।

অন্যদিকে, ইবনে উমর (রা.) মনে করেন, তিনি কুফায় জন্মগ্রহণ করবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাহদি প্রথমে মদিনায় আত্মপ্রকাশ করবেন এবং পরে মক্কায় কিছু মানুষ তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করবেন।

🔹 চেহারা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

একাধিক হাদিসে ইমাম মাহদির শারীরিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি হবেন উজ্জ্বল কপাল ও লম্বাটে নাকের অধিকারী। তাঁর শাসনকালে পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, যেভাবে আগের সময়টি জুলুম-নির্যাতনে ভরা থাকবে।
📖 (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৮৫)

🔹 আগমনের পূর্বলক্ষণ

ইমাম মাহদির আগমনের সময় পৃথিবীতে অরাজকতা চরমে পৌঁছাবে।

  • নিরপরাধ মানুষ হত্যা
  • মিথ্যার জয়জয়কার
  • পাপাচার ও ব্যভিচার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে
  • দুর্বল ও নারীদের অবস্থা হবে করুণ

ইবনে হাজার হাইতামি (রহ.) বলেন, পৃথিবীতে যখন নিরপরাধ মানুষ নির্বিচারে হত্যার শিকার হবে, তখনই মাহদির আগমন ঘটবে।
📖 (আল-কওলুল মুখতাসার)

🔹 মাহদির শাসনকাল

ইমাম মাহদি প্রায় সাত থেকে নয় বছর শাসন করবেন। এ সময় পৃথিবীতে নেমে আসবে বরকত, আকাশ থেকে নামবে নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি, ফসল হবে প্রচুর।
📖 (সিলসিলায়ে সহিহা, হাদিস : ৭১১)

🔹 ঈসা (আ.)-এর আগমন এবং দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

মাহদির শাসনকালে হজরত ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। ফজরের নামাজে ইমাম মাহদির পেছনে দাঁড়াবেন তিনি। এরপর যৌথভাবে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং তাকে পরাজিত করবেন।
📖 (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৪০)

🔹 ফিলিস্তিন মসজিদুল আকসা

ইমাম মাহদি তাঁর শাসনের শেষ পর্যায়ে মুসলমানদের নিয়ে আশ্রয় নেবেন মসজিদুল আকসায়। বাইরে থাকবে দাজ্জাল ও তার বাহিনী। এমন বিপর্যয়ের মুহূর্তে ঈসা (আ.) মুমিনদের সহায়তায় ফিলিস্তিনে প্রবেশ করবেন।

বিশ্ব এখন নানা সংকটে পর্যুদস্ত। নির্যাতন, জুলুম, মিথ্যা ও অধর্মের জয় চলছে সর্বত্র। ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সময়ই পৃথিবী অপেক্ষা করে ইমাম মাহদির মতো এক ন্যায়নিষ্ঠ নেতার জন্য। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং কিয়ামতের পূর্বের এক গুরুত্বপূর্ণ আলামত।