আকাশে বিস্ময়: মহাকাশ থেকে দেখা গেলো বিরল ‘রেড স্প্রাইট’
আকাশের বুকে বজ্রপাতের অতিপ্রাকৃত ঝলক—এমনই এক বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য ‘রেড স্প্রাইট’ (লাল স্প্রাইট) এবার ধরা পড়ল মহাকাশ থেকে। নাসার নভোচারী নিকোল অ্যায়ার্স, যিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছেন, সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ ছবি শেয়ার করেছেন—যেখানে দেখা যাচ্ছে এই বিরল আবহাওয়াগত ঘটনার এক অনন্য রূপ।
ছবিতে দেখা যায়, গাঢ় লাল রঙের ছায়াময় এক ধরনের উল্টানো ছাতার মতো আকৃতি, যা এক ঝড়ের উপরে ভেসে রয়েছে। দূর থেকে দৃশ্যটি যেন কোনো কল্পকাহিনির রাজপ্রাসাদ—ঠিক যেন “লর্ড অব দ্য রিংস”-এর কোনো রহস্যময় মিনার।
নিকোল অ্যায়ার্স এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন,
“Just. Wow. আজ সকালে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় এই স্প্রাইটটি ক্যামেরাবন্দি করলাম।”
মহাকাশ স্টেশনটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫৪ মাইল ওপরে অবস্থান করছে এবং ঘণ্টায় প্রায় ১৭,৫০০ মাইল বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এই উচ্চতা অ্যায়ার্সকে মেঘের অনেক ওপরে থেকে পৃথিবীর বৈদ্যুতিক ও আবহাওয়াগত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের অনন্য সুযোগ দিয়েছে।
নাসার ভাষ্যমতে, স্প্রাইট সাধারণত পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ মাইল উচ্চতায় দেখা যায়—যা প্রচলিত বজ্রপাতের স্তরের অনেক ওপরে। বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই কখনো কখনো আকাশে এই উজ্জ্বল লাল আলোর ঝলকানি জন্ম নেয়, যা দেখতে সূচালো লাল শিখার মতো হয়।
প্রথমবার ১৯৮৯ সালে ছবির মাধ্যমে রেড স্প্রাইটের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এত বছর পরেও বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি, কীভাবে বা কেন এই ঘটনাগুলো ঘটে।
এই ধরনের আকাশজ আগুনঝরা ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচিত Transient Luminous Events (TLEs) নামে। এর মধ্যে আরও রয়েছে—
🔹 এলভস (ELVES): একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যার পূর্ণ রূপ হলো Emission of Light and Very Low Frequency perturbations due to Electromagnetic Pulse Sources—এটি মূলত বজ্রঝড় থেকে উৎপন্ন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালসের ফলে সৃষ্টি হয়।
🔹 জেটস (Jets): যা আকাশে নীল রঙের ত্বরণধারার মতো দেখা যায় এবং মেঘ থেকে আকাশে নির্গত হয়।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহাকাশ থেকে তোলা এই ধরনের ছবিগুলো ভবিষ্যতে রেড স্প্রাইটসহ অন্যান্য আলোঝলমলে ঘটনার বৈশিষ্ট্য ও তাদের বজ্রঝড়ের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
এককথায়—মহাকাশের চোখ দিয়ে দেখা এই অদ্ভুত লাল ঝলক যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর ওপর আকাশ এখনও রহস্যে ঘেরা।