যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভার্জিনিয়া টেক–এর একদল গবেষক এক অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যা আধুনিক প্রযুক্তি আর প্রাচীন জ্ঞানের অপূর্ব সমন্বয়। তাঁরা তৈরি করেছেন একটি ৩ডি প্রিন্টেড কাদামাটির স্তম্ভ, যার ভেতরে বালু ও পানি ভরে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক বাষ্পীভবনভিত্তিক কুলিং সিস্টেম হিসেবে।

এই মাটির স্তম্ভগুলোর সাহায্যে আশপাশের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫.৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত কমানো সম্ভব। পরীক্ষামূলকভাবে এই স্তম্ভগুলোকে দেয়ালের পার্টিশন হিসেবে সাজানো হয়েছে। বিশেষত্ব হলো—এই কাদামাটির কাঠামো শুধু কুলিং ডিভাইস নয়, একই সঙ্গে শিল্পকর্ম হিসেবেও পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ায়।

কীভাবে কাজ করে এই ব্যবস্থা?
যখন গরম বাতাস স্তম্ভের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন স্তম্ভে থাকা পানি বাষ্পীভূত হয় এবং সেই বাষ্পীভবনের ফলে বাতাস ঠান্ডা হয়ে যায়। মূলত এটি প্রাচীন এক পদ্ধতির আধুনিক রূপ—যার ইতিহাস অন্তত ৪৫০০ বছর পুরোনো। প্রাচীন মিশরে মানুষ পানিভর্তি পাত্রে পাখা দুলিয়ে বাতাস ঠান্ডা রাখত। সেই ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যেও দেখা গেছে মাটির পাতিলে পানি রেখে জানালার পাশে রাখার রেওয়াজ, যাতে হাওয়ার মাধ্যমে পানি বাষ্প হয়ে ঘরের তাপমাত্রা কমে যেত।

এই প্রাচীন বুদ্ধিকে আধুনিক রূপ দিয়েছেন স্থপতি স্টেফান আল এবং তাঁর দল। তিনি বলেন, “আমরা এই প্রাচীন পদ্ধতিগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছি, তবে তা আধুনিক প্রেক্ষাপটে।”

এটি শুধু দেয়ালের জন্য নয়
এই প্রযুক্তি শুধু দেয়ালের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। গবেষকরা মনে করছেন, একই উপাদান ব্যবহার করে ভবনের বাইরের দেয়াল, চেয়ার কিংবা বসার জায়গাও তৈরি করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় সুবিধা—এতে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র পানি দিলেই কাজ করবে।

স্থপতি স্টেফান আল আরও বলেন, “এটা সাধারণ এসির মতো লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। বরং এটি দৃষ্টিনন্দন হতে পারে, শিল্প হতে পারে—যা মানুষকে সচেতন করবে আরও টেকসই ও প্রাকৃতিক উপায়ে শীতলতা পাওয়ার ব্যাপারে।”

এই উদ্ভাবন প্রমাণ করে, হাজার বছরের পুরোনো প্রাকৃতিক জ্ঞান আজও প্রাসঙ্গিক—শুধু প্রয়োজন আধুনিক চোখে দেখার ও নতুনভাবে কাজে লাগানোর।