ভবিষ্যতের এআই শক্তির চাহিদা মেটাতে গ্রাফিনই হতে পারে পরিত্রাণ
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্রমবর্ধমান প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে একটি বড় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে—এর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই চাহিদা মেটাতে আবারও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে একটি নির্বাহী আদেশে কয়লা খনন “ত্বরান্বিত” করার ঘোষণা দিয়েছেন, এই দাবি করে যে, এআই নেতৃত্ব বজায় রাখতে দেশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন এক ‘ডিস্টোপিয়ান’ ভবিষ্যত সম্ভবত এড়ানো যাবে—তাদের হাতে রয়েছে এক বৈপ্লবিক সমাধান: গ্রাফিন।
২০০৪ সালে ম্যানচেস্টারে নোবেল বিজয়ী এক গবেষণায় প্রথম গ্রাফিন আলাদা করা হয়। এটি এক পরমাণু পুরু কার্বনের পাত, যা শক্তি, পরিবাহিতা ও স্বচ্ছতার দিক থেকে অসাধারণ। দীর্ঘদিন ধরেই এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। এবার সেই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
ব্রিটেনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে কাজ করছেন এমন এক অ্যটম-থিক গ্রাফিন চিপ তৈরিতে, যা কম্পিউটার এবং এআই ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবহার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেবে। এ প্রযুক্তি সফল হলে, আগামী ২৫ বছরে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ চাহিদার প্রবণতাই বদলে যাবে।
প্রকল্পের প্রধান, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্যার কলিন হামফ্রিজ বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা কম্পিউটিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারবো—এবং সম্ভবত এর পাঁচগুণ বেশি হ্রাস করতেও পারি।” তিনি আরও জানান, ২০২৯ সালের মধ্যে একটি কার্যকর প্রোটোটাইপ তৈরি হবে এবং ২০৩২-২০৩৩ সালের মধ্যে লাখ লাখ চিপ উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে।
এখনও কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও, যদি গ্রাফিন-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি সময়মতো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তবে গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য অতিরিক্ত পরমাণু বা গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন পড়বে না।
বিশ্ব যখন টেকসই ও সবুজ শক্তির দিকে এগিয়ে যেতে চায়, তখন গ্রাফিন হতে পারে ভবিষ্যতের এআই যুগে শক্তি সাশ্রয়ের এক গেমচেঞ্জার প্রযুক্তি।