যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ — ওক্রাকোক, যেখানে ইংরেজি ভাষার এক বিশেষ রূপ এখনও জীবন্ত। এই দ্বীপে ইংরেজ, স্থানীয় নেটিভ আমেরিকান এবং সমুদ্র ডাকাতদের সম্মিলনে গড়ে উঠেছে এমন একমাত্র আমেরিকান উপভাষা, যা শুনতে মোটেও আমেরিকান ইংরেজির মতো নয়।

সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথমবার দেশটির একটি অফিসিয়াল ভাষা নির্ধারণ করা হলো। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, উত্তর ক্যারোলিনার উপকূল থেকে ২০ মাইল দূরের ৯.৬ বর্গমাইলের এই দ্বীপে এখনও প্রচলিত রয়েছে এমন এক ইংরেজি, যা যুক্তরাষ্ট্রে আর কোথাও শোনা যায় না — বরং তা ব্রিটিশ এলিজাবেথান যুগের ইংরেজির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ওক্রাকোক দ্বীপের নিজস্ব ওয়েবসাইট গর্বের সঙ্গে জানায়: “১৬০০ সালের দিক থেকে উদ্ভূত ওক্রাকোক ব্রোগ (Brogue) ভাষাভঙ্গি যতটা সম্ভব আমেরিকান সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত।”

দ্বীপটির নির্জনতা একসময় জলদস্যুদের জন্য ছিল আদর্শ আশ্রয়স্থল। ১৬০০ ও ১৭০০ শতকে এখানে সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে, ফলে সমুদ্রপথে পলাতক ডাকাতদের জন্য ছিল নিরাপদ আশ্রয়।

উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাষাবিজ্ঞানী ড. ওয়াল্ট ওলফ্রাম বলেন, “এটা একমাত্র আমেরিকান উপভাষা, যাকে আমেরিকান বলা যায় না। এটা সত্যিই চমকপ্রদ। ওক্রাকোকে এমন কিছু উচ্চারণ, ব্যাকরণ ও শব্দভান্ডার পাওয়া যায় যা উত্তর আমেরিকার অন্য কোথাও দেখা যায় না।”

দ্বীপে বিদ্যুৎ আসে ১৯৩৮ সালে, এবং ফেরি সার্ভিস চালু হয় ১৯৫৭ সালে। এতদিন দ্বীপবাসীরা মূলত বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতেন, মাঝে মাঝে জাহাজে করে মূলভূখণ্ডে যেতেন প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে। এখনো দ্বীপের পরিবেশ মূল ভূখণ্ডের চেয়ে আলাদা। এখানে নেই বড় কোনো সুপারমার্কেট বা বহুজাতিক ব্র্যান্ডের দোকান। বরং আছে চায়ের দোকান, মসলার বাজার, ছোট ছোট পারিবারিক ব্যবসা। গাড়ি থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করেন। দ্বীপের সব শিশু একটি মাত্র স্কুলে পড়ে, এবং বাসিন্দারা কেউ জেলে, কেউ কাঠমিস্ত্রি, আবার কেউ স্থানীয় ব্রিউয়ারির মালিক।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিটি নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এই বিশেষ উপভাষা। ড. ওলফ্রাম বলেন, “বিচ্ছিন্নতাই যেখানে এমন ভাষার টিকে থাকার মূল কারণ, সেখানে এখন সেই বিচ্ছিন্নতাই নেই। আগে যেটা স্বাভাবিক ছিল — অর্থাৎ স্থানীয় তরুণরা দ্বীপের ভাষায় কথা বলত — এখন সেটা বিরল।” প্রযুক্তির প্রসার এবং মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাওয়ায় ভাষার এই বিশেষত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও ওক্রাকোক দ্বীপ এখনও ইতিহাস ও ভাষার এক বিস্ময়কর অধ্যায় বয়ে চলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।