প্রতি ছয় মাসে জাতীয়তা বদলায় যে ইউরোপীয় দ্বীপ
স্পেন-ফ্রান্স সীমান্তের ‘ফিজ্যান্ট আইল্যান্ড’ এক ব্যতিক্রমধর্মী ভৌগোলিক বিস্ময়। বিশ্ব মানচিত্রের অন্যতম বিরল ঘটনা হচ্ছে একটি দ্বীপের নিয়মিতভাবে জাতীয়তা পরিবর্তন—আর সেটাই ঘটে ইউরোপের ছোট্ট দ্বীপ ফিজ্যান্ট আইল্যান্ডে, যা ফ্রান্স ও স্পেনের সীমান্তে অবস্থিত। প্রায় ২০০ মিটার লম্বা ও ৪০ মিটার চওড়া গাছপালায় ঘেরা দ্বীপটি বিদাসোয়া নদীর মাঝখানে শান্তভাবে অবস্থান করছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এই ছোট দ্বীপটি প্রতি ছয় মাস অন্তর ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে মালিকানা বদল করে।
ফিজ্যান্ট আইল্যান্ডকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কার্টোগ্রাফিক্যাল অ্যানোমালি বা মানচিত্রগত ব্যতিক্রম। দ্বীপটির ইতিহাস শুরু ১৬৫৯ সালে, যখন দীর্ঘকাল যুদ্ধ-বিগ্রহের পর ফ্রান্স (তৎকালীন রাজা লুই চতুর্দশ) ও স্পেন (রাজা ফিলিপ চতুর্থ) এক ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে তাদের সীমান্ত নির্ধারণে সম্মত হয়। সীমান্ত ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়া হয় ফিজ্যান্ট আইল্যান্ড, যেখানে সই হয় ‘ট্রিটি অব দ্য পাইরেনিস’—একটি শান্তিচুক্তি যা দুই দেশের যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটায়।
দ্বীপটির মাঝখানে রয়েছে একটি পাথরের স্তম্ভ, যা আজও বহন করে সেই ঐতিহাসিক চুক্তির স্মৃতি। ফরাসিরা একে বলে ‘ইল দ্য লা কনফারঁস’—অর্থাৎ সম্মেলনের দ্বীপ।
এই দ্বীপ শুধু শান্তিচুক্তির জন্য নয়, বরং রাজকীয় স্ত্রীর আদান-প্রদানের স্থান হিসেবেও ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। ১৬৫৯ সালে এখানেই ফরাসি রাজা লুই চতুর্দশ তাঁর স্প্যানিশ বধূ মারিয়া তেরেসা-র সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। পরে ১৭২১ সালে লুই পঞ্চদশ এখানেই প্রথমবারের মতো দেখেন স্পেনের রাজকুমারী মারিয়ানা ভিক্টোরিয়া-কে।
এতসব অদ্ভুত ঘটনার মধ্যেও ফিজ্যান্ট আইল্যান্ড সম্ভবত একমাত্র দ্বীপ, যা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর দুই দেশের মালিকানায় চলে যায়—মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ফ্রান্সের, আর আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত স্পেনের অধীনে।