নামাজ মুসলিম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তবে ইসলাম নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নামাজ আদায়কে নিষিদ্ধ ও মাকরুহ (অপছন্দনীয়) ঘোষণা করেছে। এই সময়গুলোতে নামাজ পড়া ইসলামের দৃষ্টিতে অনুচিত বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি কাজা নামাজও এই সময়গুলোতে আদায় করা যায় না।

তিনটি নিষিদ্ধ সময়: হাদিস অনুযায়ী তিনটি সময় রয়েছে, যেসব সময়ে ফরজ, ওয়াজিব বা নফল কোনো নামাজই আদায় করা বৈধ নয়।
১. সূর্যোদয়ের সময়: যখন সূর্য উঠতে শুরু করে, সে সময় থেকে সম্পূর্ণ ওঠা পর্যন্ত কোনো নামাজ জায়েজ নেই।(সহিহ বুখারি: ১৫২৩)

২. সূর্য মধ্যাকাশে থাকা অবস্থায়: ঠিক যখন সূর্য মাঝ আকাশে অবস্থান করে এবং ঢলে পড়ে না, তখন নামাজ নিষিদ্ধ। (সহিহ মুসলিম: ১৩৭৩)

৩. সূর্যাস্তের ঠিক আগ মুহূর্তে: যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে, তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ নিষিদ্ধ। তবে আসরের ফরজ নামাজ এ সময়েও পড়া যাবে। (সহিহ বুখারি: ৫৪৫)

নফল নামাজের জন্য মাকরুহ সময়: নিম্নলিখিত সময়গুলোতে নফল নামাজ আদায় করা অপছন্দনীয় (মাকরুহ) ঘোষণা করা হয়েছে:

  • ফজরের সুন্নতের পরে কোনো অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। (সহিহ মুসলিম: ১১৮৫)
  • ফজর নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। (সহিহ বুখারি: ৫৫১)
  • আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (সহিহ বুখারি: ৫৫১)
  • ইকামতের সময় অন্য কোনো নামাজে মশগুল হওয়া। (সহিহ মুসলিম: ১১৬০)
  • ঈদের নামাজের আগে ও পরে ঈদগাহে কিংবা ঘরে নামাজ পড়া মাকরুহ। (ইবনে মাজাহ: ১২৮৩)
  • ফরজ নামাজের সময় খুব কম থাকলে, তখন সুন্নত নামাজে সময় নষ্ট করাও মাকরুহ।
  • তীব্র ক্ষুধা বা খাওয়ার চাহিদা নিয়ে নামাজ পড়া অনুচিত, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (সহিহ মুসলিম: ৮৬৯)
  • প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ আদায় করাও মাকরুহ। (সহিহ মুসলিম: ৮৬৯)

জানাজা ও সিজদায়ে তিলাওয়াতের বিধান: উপরোক্ত সময়গুলোতে জানাজা নামাজ ও সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা যাবে, তবে তা মাকরুহ হিসেবে বিবেচিত হবে। (তিরমিজি: ১৫৬, বুখারি: ১২৩১, মুসলিম: ১৩৭৩)

নামাজের এই নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময়গুলো জানা এবং তা মেনে চলা একজন মুসলিমের ইবাদতকে আরও শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাই সঠিক সময় বুঝে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়াই শ্রেয়।