উদারতা ও শারীরিক সুস্থতা: একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
আমরা সবাই জানি যে, অন্যদের সাহায্য করা বা দানশীলতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে গবেষণা বলছে, এটি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও আশীর্বাদস্বরূপ।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা মানুষের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি ২৪ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়, যা প্রতিদিন ছয় বা তার বেশি ফল ও সবজি খাওয়ার মতোই উপকারী। এছাড়াও, স্বেচ্ছাসেবীরা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ-সংক্রান্ত প্রদাহের ঝুঁকিতে কম ভোগেন এবং হাসপাতালে রাত কাটানোর সংখ্যাও গড়ে ৩৮ শতাংশ কম থাকে।
এই ইতিবাচক প্রভাব কেবল নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। স্পেন, মিশর, উগান্ডা, জ্যামাইকা—প্রায় সবখানেই এই সম্পর্ক বিদ্যমান বলে গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোলের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সুস্থ মানুষরাই কি বেশি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নেন? ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ও দানশীলতা গবেষক সারা কনরাথ জানান, গবেষকরা এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেন, এবং তাতেও দেখা যায় যে, স্বেচ্ছাসেবার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সুস্পষ্ট।
একটি গবেষণায়, কানাডার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুই মাস ধরে ছোট শিশুদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেখানে আরেকটি দলকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়। চার মাস পর দেখা যায়, যারা অন্যদের সাহায্য করেছিল, তাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও প্রদাহজনিত উপাদান (যেমন ইন্টারলিউকিন-৬) কম ছিল, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, নাতি-নাতনিদের দেখাশোনা করা দাদা-দাদির মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কম হতে পারে, যা নিয়মিত ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপকারী বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।
সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী ট্রিস্টেন ইনাগাকি বলেন, “মানুষ খুবই সামাজিক প্রাণী, আন্তঃসংযোগ থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অন্যদের সাহায্য করাও সেই আন্তঃসংযোগের একটি অংশ।”