“ভাইবোন”
কোনো এক বিশেষ কারণে আমার ছোটো বেলার স্মৃতিগুলি একদম জ্বলজ্বলে।
তখন আমার বয়স ৫/৬ বছর হবে।
মা মারা গেছেন বিধায় আমি গ্রামে দাদীর সাথেই থাকি। আর অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কবে আমার আর বাকি ভাইবোনেরা গ্রামে আসবে।
দুপুরে দাদী ঘুমালেই রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে রুমাল উড়াতাম, কারণ আমার প্রতিদিন ধারণা হতো, আজ আমার আপনজন কেউ না কেউ রেল গাড়িতে থাকবেন এবং আমার রুমাল উড়ানো দেখতে পাবেন।
বেশিরভাগ দিনই কেউ আসতো না। আমি মন খারাপ করে পুকুরঘাটে বসে থাকতাম।
গ্রামের সব্বাই বলতো মেয়েটার “মা” নেই, মেয়েটার সাথে জ্বিনভূত থাকে”।
কারণ আমি প্রায়ই সূর্য ওঠার আগেই অন্ধকারে কবরে গিয়ে বসে থাকতাম আমার মায়ের দেখা পাবো বলে। দাদী ফজরের নামাজ পড়ে হৈচৈ করে আমাকে খুঁজতেন।
যথারীতি একদিন রুমাল উড়াতে থাকলাম রেলগাড়ির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। হঠাৎ আমার ছোট্ট পাখির সমান বুক ধরাস করে কেঁপে উঠলো। দেখি আমার ভাইজান (অভিনেতা চ্যালেঞ্জার) আমাকে দেখে হাত নাড়ছেন আর চিৎকার করে বলছেন “মিঠু ও মিঠু, এই যে আমি।”
আমি রালগাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে ছুঁটতে লাগলাম। আমার ভাইজান কে এতদিন পর দেখে আমার ছোট্ট পায়ে “বায়োনিক ওমেনের” মতো দ্রুত গতিতে দৌঁড়াচ্ছিলাম।
একটা সময় দেখলাম রেলগাড়িত স্টেশনের দিকে চলে গেলো। আমি গালভরা পানি নিয়ে হাঁপাতে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পর দেখি মিঠু মিঠু বলে চিৎকার করতে করতে রেললাইন ধরে দৌড়ে আসছেন আমার ভাইজান। এসেই আমাকে কাঁধে তুলে নিলেন, অস্ফুটে গলায় বললেন “এতোটা পথ তুমি কিভাবে এলে মিঠু ??”
তখন আমার মুখে ছিলো বিশ্ব জয়ের হাসি, আর ভাইজান শুধু চোখের পানি মুছছিলেন।
মনিরা আক্তার মিঠু
অভিনেত্রী