নেপাল বৈদ্যুতিক যানবাহনে বৈশ্বিক নেতৃত্বে: নতুন গাড়ির ৭০ শতাংশই ইভি
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি দেখিয়েছে হিমালয় ঘেরা নেপাল। চলতি বছরে দেশটিতে বিক্রি হওয়া নতুন চার চাকার যাত্রীবাহী গাড়ির ৭০ শতাংশেরও বেশি এখন ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি)। বৈশ্বিক পরিসরে এ অর্জন নরওয়ের পরই দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে নেপাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও ইভি এখন নেপালি ভোক্তাদের জন্য সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত বিকল্প। গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় ইভি-র ব্যয় কম, রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি (হাইড্রোপাওয়ার) ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। এখানে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত সীমার ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। শহরের মোট বায়ু দূষণের প্রায় ২৫ শতাংশই আসে পরিবহন খাত থেকে, যেখানে ১৭ লাখের বেশি যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করছে।
এই সমস্যা সমাধানে ইভি কার্যকর সমাধান হিসেবে সামনে এসেছে। নেপালের প্রচুর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকায় এসব গাড়ি চার্জ হয় পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, আর তৈরি করে না কোনো সরাসরি দূষণ।
সরকারও ইভি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানিতে করের হার কম, ব্যাংকগুলো দিচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সবমিলিয়ে এখন আর গ্যাসচালিত গাড়ি কেনা আর্থিক দিক থেকেও অযৌক্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নেপাল ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ইভি বাজারে চীনা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে নেপালে আমদানিকৃত বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রায় ৭৫ শতাংশই চীন থেকে আসে।
শুধু স্বল্প খরচ ও পরিচ্ছন্ন বায়ুই নয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও ইভির অবদান অনস্বীকার্য। কারণ, নেপাল পুরোপুরি বিদেশ থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করে। বৈদ্যুতিক যানবাহনের মাধ্যমে সেই ব্যয় হ্রাস পেয়ে দেশীয় অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে নেপাল হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথিকৃৎ।