জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত করলো বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ঘোষণা করেছে যে, একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল জলবায়ু মানুষের মৌলিক অধিকার—এবং তা রক্ষায় রাষ্ট্রগুলোর আইনগত দায়িত্ব রয়েছে।

এই রায়ের ফলে, কোনো দেশ যদি কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হয়, নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন দেয় বা তেল ও গ্যাস খাতে সরকারি অর্থায়ন অব্যাহত রাখে, তবে তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।

এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে “জলবায়ু ন্যায়ের এক প্রজন্মে একবার আসা মুহূর্ত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে পরিবেশ আইন সংস্থা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’ (CIEL)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “জলবায়ু দায়মুক্তির যুগ শেষ। এই রায় বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ন্যায়ের জন্য একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করল।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও আদালতের এই পরামর্শমূলক রায় আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। এটি ভবিষ্যতের জলবায়ু-সংক্রান্ত মামলাগুলোর জন্য আইনি দিকনির্দেশনা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

ভানুয়াতুর শিক্ষার্থীদের অনন্য সাফল্য
এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা, যাদের অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ থেকে এসেছেন, এই উদ্যোগ নেন।

ছাত্রনেতা সলোমন ইয়েও ও তার সহপাঠীরা তখন ভাবেন, জলবায়ু ক্ষতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আইসিজে’র মতামত প্রয়োজন। বছরের পর বছর পরিশ্রম শেষে অবশেষে তারা সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।

বিশ্বব্যাপী আইনি প্রভাবের সম্ভাবনা
পরিবেশ বিষয়ক আইন সংস্থা ‘ক্লায়েন্ট আর্থ’-এর আইনজীবী লিয়া মেইন-ক্লিংস্ট বলেন, “অবাধে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও বিনিয়োগের যুগ এখন শেষ। এই রায়ের মাধ্যমে বিচারকদের জন্য একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা তৈরি হলো যা আগামী বহু দশক জুড়ে জলবায়ু মামলা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে নাগরিক সমাজ ও আইনজীবীদের এই নতুন আইনি হাতিয়ার ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু ন্যায়ের আন্দোলন জোরদার করার।”

এই রায় বিশেষভাবে আশার আলো জাগিয়েছে সেইসব দেশ ও জনগণের মধ্যে, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি শিকার কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এতদিন ছিল প্রভাববঞ্চিত।

বিশ্বজুড়ে পরিবেশ আন্দোলনের জন্য এটি এক বড় বিজয়, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।