বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট মোকাবেলায় একটি নতুন ও ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান নিয়ে এসেছে একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি লবণাক্ত পানি নিষ্কাশনের (ডিসালিনেশন) প্লান্ট সমুদ্রের গভীরে স্থাপন করা হয়, তাহলে এটি প্রচলিত স্থলভিত্তিক প্লান্টের তুলনায় প্রায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম শক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে পারে।

এই পদ্ধতিতে সমুদ্রের গভীর, কমপক্ষে ৪০০ মিটার নিচের পানির স্বাভাবিক উচ্চচাপকে কাজে লাগানো হয়। এত গভীরে পানির চাপ এমন পর্যায়ে থাকে যে, তা নিজে থেকেই ডিসালিনেশন মেমব্রেনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে চায়। ফলে আলাদা করে পানিকে ওপরে তুলতে অধিক শক্তি ব্যয় করতে হয় না। শুধুমাত্র মিষ্টি পানি ওপরে তোলার জন্য সামান্য শক্তি প্রয়োজন হয়।

নরওয়ের ওসলো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Flocean ইতোমধ্যে একটি পরীক্ষামূলক ইউনিট স্থাপন করেছে, যা স্থানীয় একটি বরফ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। কোম্পানির প্রথম বৃহৎ প্রকল্প হচ্ছে মংস্তাড নামক একটি শিল্প এলাকার জন্য, যেখানে দৈনিক প্রায় ১০ লাখ লিটার পানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ইউনিটটির ওজন হবে প্রায় ৪০ টন।

Flocean জানায়, ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রকল্প চালু হবে এবং এটি হবে বিশ্বের প্রথম বৃহৎ আকারের গভীর সমুদ্র ডিসালিনেশন প্লান্ট। এই প্রযুক্তি আসলে নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উপর নির্ভর করে না, বরং সমুদ্রতল থেকে তেল উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত সাবমেরিন রোবট, পানির নিচের কেবল, এবং অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত — যেগুলো এখন আরও সহজলভ্য এবং কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়াও, নেদারল্যান্ডসের Waterise এবং যুক্তরাষ্ট্রের OceanWell নামক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর অন্তত এক মাস করে প্রায় অর্ধেক জনগণ তীব্র পানি সংকটে ভোগে। এমন বাস্তবতায় যদি এই নতুন প্রযুক্তি আরও বিস্তৃতভাবে কার্যকর হয়, তবে তা হবে বিশ্বজুড়ে পানির জন্য হাহাকাররত মানুষের জন্য এক বড় সুসংবাদ।