প্লাস্টিক বোতল রিসাইক্লিংয়ে নরওয়ে আজ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। দেশটির প্রায় ৯৭ শতাংশ প্লাস্টিক পানীয় বোতলই পুনর্ব্যবহৃত হয়, এবং এর পেছনে রয়েছে একটি চমকপ্রদ ‘রিসাইক্লিং লটারি’। সম্প্রতি কানাডার গবেষকরা বলছেন, এই লটারির মতো পরিকল্পনা যদি আরও দেশ গ্রহণ করে, তবে রিসাইক্লিং হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে পারে।

জার্নাল ‘Waste Management’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি মানুষকে প্রতিটি বোতল ফেরতের জন্য ৫ বা ১০ সেন্ট নিশ্চিত অর্থের বদলে ১ থেকে ১০,০০০ অনুপাতে ১,০০০ ডলার জেতার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তারা অনেক বেশি উৎসাহিত হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা ৪৭ শতাংশ বেশি বোতল ফেরত দিয়েছে শুধুমাত্র লটারি জয়ের সম্ভাবনার কারণে।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণার প্রধান লেখক ড. জিয়ায়িং ঝাও বলেন, “নগদ পুরস্কার জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা অনেকের কাছেই একটি গ্যারান্টি অর্থের চেয়ে বেশি আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। লটারি কেনা আর রিসাইক্লিং লটারির মধ্যে অনেক মিল—একটি সম্ভাবনার আনন্দ মানুষকে কার্যকলাপে যুক্ত করে।”

গবেষকরা দেখেছেন, এমনকি যারা লটারি জেতেনি তারাও ‘anticipatory happiness’ অনুভব করেছেন—যেটি একটি মানসিক আনন্দ, যা আসে সম্ভাবনার উত্তেজনা থেকে।

এই গবেষণা নরওয়ের সফল মডেলের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত, যেখানে দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই ‘রিসাইক্লিং লটারি’ কার্যকর রয়েছে। নরওয়ের নাগরিকরা প্রতি বোতল ফেরতের সময় বেছে নিতে পারেন: হয় কিছু টাকা ফেরত বা ৫ থেকে ১ লাখ ইউরো পর্যন্ত পুরস্কার জেতার সুযোগ। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিই নরওয়েকে করেছে রিসাইক্লিংয়ের বিশ্বনেতা।

ড. ঝাও বলেন, “নরওয়ের এই ‘সম্ভাব্য পুরস্কারভিত্তিক’ রিসাইক্লিং মডেলটাই হয়তো তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আমরা আশা করি কানাডাসহ আরও দেশ এটি অনুসরণ করবে।”

এই গবেষণা প্রমাণ করে, সঠিক প্রণোদনার মাধ্যমে সচেতনতা ও অংশগ্রহণ অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব—পরিবেশ রক্ষায় যা হতে পারে এক বড় পদক্ষেপ।