সাহাবিদের যুগে চিকিৎসাসেবার চিত্র: নবীজির (সা.) অনুপ্রেরণায় ইসলামী চিকিৎসার বিকাশ
ইসলামের সূচনালগ্নেই চিকিৎসাশাস্ত্র পেয়েছিল নতুন দিশা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্বয়ং চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবন করে রোগীদের সেবা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন এবং সাহাবিদের চিকিৎসাশাস্ত্রে উৎসাহিত করেছেন। যদিও তিনি নিজে পেশাদার চিকিৎসক ছিলেন না, তবে ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে রোগ নিরাময়ের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার আরোগ্য নেই।” খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা এবং পানির ব্যবহার—এসব বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা ছিল অসাধারণ। ইমাম বুখারির ‘সহিহ বুখারিতে’ চিকিৎসা নিয়ে আলাদা অধ্যায় রয়েছে এবং ইবনুল কাইয়্যিমের ‘আত তিব্বুন নববী’ গ্রন্থে শতাধিক রোগ ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
মহানবীর (সা.) অনুপ্রেরণায় অনেক সাহাবি চিকিৎসাবিদ হিসেবে পরিচিতি পান। যেমন—আবু রমসা (রা.) ক্ষতস্থানের বিশেষজ্ঞ ছিলেন, জিমাদ বিন সালাবা (রা.) পেটের রোগ চিকিৎসায় দক্ষ ছিলেন এবং শমরদল নাজরানি (রা.) চিকিৎসা বিষয়ে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সরাসরি আলাপ করেন।
নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। রুফাইদা আসলামিয়া (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম নারী চিকিৎসক। মদিনায় তাঁর নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্র ছিল এবং তিনি যুদ্ধাহতদের সেবা দিতেন। উম্মে আতিয়্যা (রা.) যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের চিকিৎসা ও সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সাহাবিদের এই ধারাবাহিকতায় ইসলামী চিকিৎসাব্যবস্থা এক সময় উন্নত ও সুশৃঙ্খল রূপ নেয়। পরবর্তীকালে মুসলিম চিকিৎসাবিদরা রসায়ন, ওষুধ উদ্ভাবন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা পেশার পেশাগত মান নির্ধারণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
মার্কিন গবেষক জোসেফ ক্যাম্পবেলের ভাষায়, “আরবরা চিকিৎসাকে কেবল একটি পেশা হিসেবে দেখেননি, বরং এটিকে জ্ঞানভিত্তিক এক মহান শিল্পে রূপ দিয়েছেন।”