১৭ জুন, ১৮৮৫— এই দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বন্দরে এসে পৌঁছায় ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’। বিশাল এই ভাস্কর্যটি এসেছিল ফ্রান্স থেকে, বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ। ফরাসি দাসপ্রথা-বিরোধী আন্দোলনের এক নেতার প্রস্তাবে ১৮৬৫ সালে এই ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল – সব মানুষের জন্য স্বাধীনতার যে আদর্শ আমেরিকা ধারণ করে, সেটিকে সম্মান জানানো।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই উপহারটি ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সে সময় এর নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ২৫০,০০০ ডলার, যা আজকের দামে ৫.৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পুরো কাজটি শেষ হতে সময় লাগে দুই দশকের বেশি। অবশেষে ১৮৮৫ সালে এটি ৩৫০টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ২১৪টি কাঠের বাক্সে করে নিউইয়র্কে এসে পৌঁছায়।

এরপর, ১৮৮৬ সালের এপ্রিল মাসে বিখ্যাত মার্কিন স্থপতি রিচার্ড মরিস হান্ট স্ট্যাচুর জন্য নির্ধারিত বিশাল গ্রানাইট ভিত্তি নির্মাণ সম্পন্ন করেন। এরপর একত্রিত করা শুরু হয় বিশ্বের অন্যতম বড় এই ভাস্কর্যটি।

১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন।

ভূমি থেকে মশাল পর্যন্ত স্ট্যাচু অব লিবার্টির উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি (প্রায় ৯৩ মিটার)। তবে এই ভাস্কর্যের হৃদয়স্পর্শী বার্তাটি যুক্ত হয় আরও পরে।

১৯০৩ সালে বিখ্যাত আমেরিকান কবি এমা ল্যাজারাস রচিত একটি কবিতা The New Colossus” ব্রোঞ্জ ফলকে খোদাই করে ভাস্কর্যের ভিত্তির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই কবিতাটিই আজও বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।

নিচে এমা ল্যাজারাসের সেই ঐতিহাসিক কবিতাটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো:

নতুন কলসাস

না, এটি গ্রিসের দম্ভিত দৈত্য নয়,
যার জয়ী অঙ্গজোড়া ভূমি হতে ভূমি জয় করে।
বরং, আমাদের এই সমুদ্রভেজা সূর্যাস্তের ফটকে দাঁড়াবে
এক বিশাল নারী, হাতে এক মশাল, যার শিখায়
আটকে আছে বজ্রবিদ্যুৎ, এবং তার নাম –
উৎখাতদের জননী। তার আলোকিত হাত ডাকে
বিশ্বব্যাপী স্বাগত, তার শান্ত চোখ চেয়ে থাকে
সেই বন্দরপানে, যেটি দুই নগরীকে এক করে। “তোমাদের প্রাচীন গৌরব, হে পুরাতন ভূমি, রাখো তোমাদেরই!”—
সে বলে, নিরব ঠোঁটে।
“দাও আমায় তোমাদের ক্লান্ত, দরিদ্র,
দমন-পীড়নে হাঁপিয়ে ওঠা গাদাগাদি জনতা,
দাও তাদের – যারা আশ্রয়হীন,
ঝড়ে বিপর্যস্ত।
তাদেরই পাঠাও আমার দিকে,
আমি আমার মশাল উঁচিয়ে রাখি,
সোনালী দ্বারের পাশে।”