মানুষের জীবনে বিপদ-আপদ অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং অনেক সময় এই বিপদই নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। জীবনকে করে আরও পরিপক্ব, শক্তিশালী ও সচেতন। অনেক বিপদ মানুষের জন্য আখিরাতের মর্যাদা ও দুনিয়ার প্রজ্ঞা অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।”
(সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

এই আয়াত আমাদের বোঝায়, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন জীবনচক্রের অংশ। যেমন রাত আসে দিনের পর, তেমনি সুখ আসে দুঃখের পর। তাই কোনো বিপদকে যদি আমরা জীবন থেকে অচেনা বা অপ্রত্যাশিত বলে না মেনে ধৈর্য ধরে থাকি, তাহলে তা সহজ হয়ে যায়।

বিপদই হয়ে ওঠে নেয়ামত

যখন মুমিন ব্যক্তি বিপদে পড়ে ধৈর্য ধারণ করেন, তখন সেই বিপদই তার জন্য কল্যাণে রূপ নেয়। তবে যদি সে আল্লাহর ওপর ভরসা হারায়, তবে সেই বিপদই তার জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর! তার প্রতিটি অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। সুখ পেলে সে শুকরিয়া আদায় করে, আর দুঃখ পেলে ধৈর্য ধরে—দুই অবস্থাই তার জন্য ভালো।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৩৯০)

বিপদে প্রিয় বান্দার পরিচয়:

সকল বিপদ যে আল্লাহর অবহেলার ফল—তা নয়। বরং আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বেশি বেশি পরীক্ষা করেন, যেন তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
রাসুল (সা.) বলেন—
“বিপদ যত বড় হয়, পুরস্কারও তত বড় হয়। আল্লাহ যদি কাউকে ভালোবাসেন, তাঁকে পরীক্ষা করেন। কেউ যদি সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি; আর কেউ অসন্তুষ্ট হলে তার জন্য আছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।”
(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০৩১)

কষ্টের পরেই আসে স্বস্তি:

মুমিনের কিছু হারায় না। শত্রুরা চাইলেও তার মর্যাদা মুছে দিতে পারে না, কারণ আল্লাহ সেই আঘাতকেও কল্যাণে পরিণত করেন।
আল্লাহ বলেন—
“নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে আছে স্বস্তি।”
(সূরা আল ইনশিরাহ, আয়াত: ৬)

আর আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত—
“রাসুল (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও, কিংবা তার চেয়ে ছোট কিছু হলেও, আল্লাহ তাতে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং গুনাহ মাফ করে দেন।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৪৫৫)

আমাদের করণীয়:

বিপদের সময় ভেঙে না পড়ে, বরং ধৈর্য, প্রার্থনা ও আল্লাহর ওপর আস্থা রাখাই মুমিনের চিহ্ন। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে কখনো হতাশ করেন না। বরং যিনি ধৈর্য ধরেন, তাঁর জন্য তিনি আরও উত্তম কিছু সংরক্ষণ করে রাখেন।

আসুন, প্রতিটি পরীক্ষায় ধৈর্য ও ঈমানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হই। আল্লাহর সন্তুষ্টিই হোক আমাদের চূড়ান্ত প্রাপ্তি।